নবুওয়তী আদব তথা ইসলামী শিষ্টাচার মানব জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, যারা সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব, লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও বীরত্বে ছিলেন অতুলনীয়

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আল্লাহর রাসুল (সা.) এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এটি এমন এক বৈশিষ্ট্য যার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রশংসা করে বলেছেন: " " انك لعلي خلق عظيم অর্থাৎ আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী।
আর স্বয়ং রাসুল (সা.) নিজেও বলেছেন যে, আমি শুধুমাত্র নৈতিকতাকে পরিপূর্ণ রূপ দান করতে প্রেরিত হয়েছি: انما بعثت لاتمم صالح الاخلاق " "। নও মুসলিমরাও যখন তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে অন্যদের কাছে প্রশংসা করত বা তাঁর নৈতিক বৈশিষ্ট্যকে বর্ণনা করত এবং তাঁর আহবানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে এটাকেই বুঝাতো যে: " و يأمر بمكارم الاخلاق ‌" । মাফরুক নামের ব্যক্তি যখন মুসলমান হলো এবং হযরত রাসুল (সা.) এর দাওয়াতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত হলো, সে রাসুলুল্লাহকে (সা.) সম্বোধন করে বললো: হে কুরাইশি ভাই ! আপনি মানুষকে " مكارم الاخلاق و محاسن الاعمال ‌" উত্তম চরিত্র ও ভাল কাজের প্রতি দাওয়াত করে থাকেন। হযরত রাসুলও (সা.) তার শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন এবং বলতেন: আল্লাহ তায়ালা করিম (দয়ালু) এবং তিনি কেরামত (উদারতা) ও নৈতিক মূল্যবোধকে পছন্দ করেন। আর নোংরা ও হীন কাজ করাকে অপছন্দ করেন। (মোসান্নেফ আব্দুর রাজ্জাক, ১১/১৪৩) এবং অন্য এক স্থানে বলেন: কিয়ামত দিবসে মোমিন ব্যক্তির জন্য তার আমলের দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারি বস্তু হবে তার ভাল ব্যবহার। (মোসান্নেফ আব্দুর রাজ্জাক, ১১/১৪৬) আরও বলেন: তোমাদের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু, যে মানুষের সাথে অধিক বন্ধুত্ব বজায় রাখে। (মোসান্নেফ আব্দুর রাজ্জাক, ১১/১৪৫)
সাধারণ মানুষ ও পরিবারের সাথে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর চারিত্রিক ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্রে ও গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আমরা তাঁর সেই বৈশিষ্ট্যের কিছু অংশ এবং মানুষকে ইসলামি শিক্ষা দানে হযরতের কিছু নৈতিক পদ্ধতির দিকসমূহ ও তার সঠিক অর্থ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

অন্ধ ধার্মিকতার প্রতিরোধ
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এলাহি ও ঐশী আইনকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) হচ্ছেন পবিত্র কোরানের অনুগত এবং পবিত্র কোরানের সীমা লঙ্ঘন করা তাঁর পক্ষে কোন মতেই জায়েজ বা অনুমোদিত নয়। আর এ জন্যই কোরানের মত অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি থেকে তিনি অসন্তুষ্টতা প্রকাশ করেছেন এবং যেভাবে রাসুলকে (সা.) সোজা পথে চলতে হুকুম করা হয়েছে, তিনিও সেভাবেই জনগণের মাঝে সে পদ্ধতিটিই প্রসার করার চেষ্টা করেছেন, « و استقم كما امرت ‌»
রাসুল (সা.) মানুষকে আহকাম শেখানো এবং তাদের জন্য দ্বীন ও শরীয়তী আহকামের সীমাকে নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন। আর এই চেষ্টার মাধ্যমে মানুষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, ধর্মকে যেন আল্লাহ ও তার রাসুলের কাছ থেকে নেয়া হয় এবং হালাল ও হারামকে যেন কোরানের মাধ্যমেই চেনা হয়। পবিত্র কোরানে ইয়াহুদ জাতিকে কয়েক বার বিনা কারণে হালালসমূহকে হারাম করার কারণে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
কোরান, রাসুল ও দ্বীনের ইমামগণ যেমন ভাবে লাগামহীনতাকে ঘৃণা করেন ঠিক তেমনিভাবে অন্ধ ধার্মিকতা যা বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতার কারণে সৃষ্টি হয় এবং বাহ্যিক দিককে আঁকড়ে ধরে, তা থেকেও অসন্তুষ্টতা প্রকাশ করেছেন।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদেরকে ভ্রমণরত অবস্থায় রোজা রাখতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু কিছু অতি অন্ধ ধার্মিক লোক নিজেদের ইচ্ছা মোতাবেক রোজা রাখছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের এই আচরণে প্রচণ্ড রাগান্বিত হলেন এবং সেই অবস্থায় যখন তারা উটে আরোহিত ছিল, পানির পাত্রকে নিলেন এবং তাদের বললেন: " " افطروا يا معشر العصاة এই অপরাধীরা, ইফতার করো। (তাহযিবুল আসার মোসনাদু ইবনে আব্বাস, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৯২)
রাসুলুল্লাহ (সা.)  আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন হালাল জিনিসকে হারাম করতেন না, এমনকি যদি কোন জিনিসকে তিনি স্বয়ং অপছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) রসুনের গন্ধ পছন্দ করতেন না এবং বলতেন, যে ব্যক্তি রসুন খেয়েছে সে যেন আমার পাশে না বসে, এমতাবস্থায় এটিও বলতেন যে, আমি এটাকে হারাম করছি না, কেননা আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার অনুমতি আমার নেই কিন্তু আমি এই গন্ধকে পছন্দ করি না
« يا ايها الناس انه ليس بي تحريم ما أحل الله و لكنها شجرة أكره ريحها ». (امتاع 7/310 (
আল্লাহর হালাল ও হারামসমূহকে মানুষকে শিক্ষা দান করা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর এক প্রধান দায়িত্ব ছিল এবং তিনি এ বিষয়ে অধিক গুরুত্বারোপও করতেন। এ বিষয়টিকে কোরানও বারংবার উল্লেখ করেছে যে, এটি হচ্ছে আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সীমা আর তা লঙ্ঘন করা কারো জন্যই সমুচিত নয়।
যে বিষয়টি এখানে গুরুত্ব রাখে তা হচ্ছে, কোরান ও হাদিসকে বুদ্ধিমত্তা ও বোধশক্তির মাধ্যমে বোঝা উচিত এবং কোন কিছুকে শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা হলে তা মানুষকে ভুল সিদ্ধান্তের পথে পরিচালিত করে। এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যথাযথ হবে। ইমাম হোসাইন (আ.) সিফ্ফিনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আমর ইবনে আসের পুত্র আব্দুল্লাহর সাথে যে তার পিতার সাথে সিফ্ফিনের যুদ্ধে ইমাম আলীর (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, কথা বলতেন না। আবু সাইদ খুদরি পরবর্তীতে মদিনাতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বতা স্থাপন করে দেয়। যখন ইমাম (আ.) তার সাথে কথা বললেন, আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিক হাদিস মোতাবেক এটা জানো যে, আসমান বাসীদের দৃষ্টিতে জমিনে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছি আমি। তারপরও কেন সিফ্ফিনের যুদ্ধে আমার পিতার বিরুদ্ধে যিনি আমার থেকেও উত্তম ছিলেন যুদ্ধ করলে ? আমর ইবনে আসের পুত্র এর দলিল স্বরূপ বলল: আমি রাসুলুল্লাহর (সা.) সময় খুব পরহেজগার ও জাহেদ ব্যক্তি ছিলাম এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবনকে খুব কষ্টের মাধ্যমে পরিচালিত করতাম। দিনসমূহকে রোজা ও রাতসমূহকে নামাজের মাধ্যমে অতিবাহিত করতাম। আমার পিতা আমার এই বাড়াবাড়ি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে অভিযোগ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন: নিজের পিতার এতা'আত ও অনুসরণ করো। যখন আমার পিতা সিফ্ফিনের যুদ্ধে যাচ্ছিলেন তখন আমি তার অনুসরণ করি। ইমাম (আ.) বললেন: তোমার এই কর্ম এই হাদিসের لاطاعة لمخلوق في معصية الخالق " " (আল্লাহর বিরোধিতার ক্ষেত্রে কোন মাখলুকের অনুসরণ জায়েজ নয়) সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে না। এমনকি তোমার এই কর্ম এই আয়াতেরও বিপরীত যেখানে বলা হয়েছে:"  " و ان جاهداك انتشرك بي فلا تطعهما যদি তোমার পিতামাতা তোমাকে শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়, তবে তাদের অনুসরণ করো না।
এই ঘটনার মাধ্যমে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস এটি স্পষ্ট করেছে যে, সে রাসুলুল্লাহর (সা.) এই বাক্য থেকে, যেখানে তিনি পিতার অনুসরণ সম্পর্কে বলেছেন কিভাবে ভুল শিক্ষা নিয়েছে এবং শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে যাচাই করেছে।

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং আতর বা সুগন্ধি লাগানো ইত্যাদি
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সাধারণভাবে পরিচালনা করতেন এমনকি তার চেয়েও ভাল ও সুন্দর আকারে। সাদা পোশাক পড়তেন, আতর ও সুগন্ধি লাগাতেন, চুলকে চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতেন, প্রতিনিয়ত দাঁত মিসওয়াক করতেন।
এ সব কিছুর মধ্যে আতর লাগানো তাঁর একটি বিশেষ দিক ছিল। রেওয়ায়েতে আছে যে, রাসুলুল্লার (সা.) বাসায় একটি নির্দিষ্ট স্থান ছিল যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় আতর লাগাতেন। আনাস বলেন: "  " كانت لرسول الله سُكّة يتطيّب منها। এক অন্য রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলতেন: এই দুনিয়ায় আতর, স্ত্রী ও নামাজকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন, অবশ্য নামাজ সম্পর্কে আরও বলতেন:"  قرة عيني في الصلاة " অর্থাৎ নামাজের মধ্যেই হচ্ছে আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি। (মোসান্নেফ, ৪/৩২১)
এক ব্যক্তি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে যে, আমি যখন শিশু ছিলাম তখন রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে আসতাম, তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। যখন তিনি তাঁর হাত আমার মাথায় রাখতেন তখন তার আতরের সুগন্ধি এমনভাবে উপলব্ধি করেছি যে আজও তা ভুলতে পারিনি। অতঃপর বলে:  আতরের সুগন্ধি এত বেশি ছিল যে, মনে হত আতরের দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। (امتاع: ৭/১০২) যদি কেউ রাসুলুল্লাহকে (সা.) আতর দিত তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতেন না।
 আরও বর্ণিত হয়েছে যে,كان رسول الله يعرف بريح الطيب "  " রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আতরের সুগন্ধির মাধ্যমে চেনা জেতেন। (মোসান্নেফ, ৪/৩১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) দুর্গন্ধযুক্ত খাবার যা মানুষকে বিরক্ত করে তা পরিত্যাগ করতেন। বিশেষত যখন রসুন হত আর তার দলিল স্বরূপ তিনি বলতেন:  أكرهه من أجل ريحه.
চুলে মেহদি ও খেযাব লাগানোকেও তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। রাসুলূল্লাহ (সা.) মহিলাদেরকে তাদের চুলে মেহদি লাগানোর নির্দেশ দিতেন। যদি স্বামী থাকে তাহলে স্বামীর জন্য আর যদি স্বামী না থাকে তাহলে যেন অধিক বিয়ের সম্পর্ক আসে। (মোসান্নেফ, ৪/৩১৯)
যে মহিলাদের হাতে মেহেদি বা খেযাব লাগানো থাকতো না আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে ভাল চোখে দেখতেন না। (মোসান্নেফ, ৭/৪৮৮)
সাধারণ জনগণ এমনটি চিন্তা করে থাকেন যে, এ সমস্ত বিষয় শুধুমাত্র সম্পদশালীদের জন্য যদিও বিষয়টি এমন নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও সাধারণ জীবন যাপন করতেন, রাতে যে পাটির উপর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন দিনে সে পাটির উপরেই বসতেন এবং জনগণের সাথে কথা বলতেন, আর মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করতেন। (امتاع: ৭/১১৫) তার খাওয়া খাওয়ার ধরণও ছিল সাধারণ, মাটির উপর বসতেন ও খাবার খেতেন। (امتاع: ৭/২৬২)
" كان رسول الله يجلس علي الارض و يأكل علي الارض "
রেওয়ায়েতে এসেছে যে, যতদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবিত ছিলেন ততদিন রাসুলুল্লাহর (সা.) পরিবার পরপর তিনদিন ভরপেট থাকতেন না। (امتاع: ৭/২৬৩)

নবী করিম (সা.) ও রসিকতা মেজাজ
নবী করিম (সা.) একজন রসিক ব্যক্তি ছিলেন এবং কখনো তাকে রাগান্বিত অবস্থায় দেখা যায়নি। হাদিসে এসেছে যে, " كان بالنبي دعابة‌، يعني مزاحا " রাসুলুল্লাহর (সা.) চেহারায় সর্বদা তাবাস্সুম ও মুচকি হাসি থাকত এবং কখনো অট্টহাসি দিতেন না। "ما رأيت النبي‌ ضاحكا ما كان الا يتبسم‌."
আল্লাহর রাসুল (সা.) এর এই রসিকতাপূর্ণ স্বভাব তাঁকে যেমন সতেজ রাখত অন্যদেরকেও শান্তি ও সন্তুষ্টিটা দান করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যদেরকেও রসিকতা করার সুযোগ দিতেন। যেমন: এক বেদুইন আরব রাসুলুল্লাহর (সা.) জন্য এক উপহার নিয়ে আসল। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই উপহারটিকে ব্যবহার করলেন, তখন সেই বেদুইন এলো ও মূল্য দাবি করল এবং বলল: আমার উপহারের দাম দিন। এরপর থেকে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বিষণ্ণ থাকতেন বলতেন সেই বেদুইন কোথায়, সে আসুক এবং আমাকে এই বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দিক।
অবশ্য নবী করিম (সা.) অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক রসিকতাকে পছন্দ করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে হাযাফে, তখনকার এক রসিক স্বভাবের ব্যক্তি ছিল যাকে রাসুলুল্লাহ (সা) এক যুদ্ধে প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। সেখানে সে তার সৈন্য বাহিনীকে বলল: আগুন জ্বালাও, অতঃপর বলল: আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। তারা বলল: আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.) এর প্রতি ঈমান এনেছি যাতে করে আগুন থেকে সুরক্ষিত থাকি (অন্য এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে: তারা চেয়েছিল আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে হাযাফে বাঁধা দেয় এবং বলে: আমি ঠাট্টা করেছি) তারা যখন রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে এলো ঘটনাটি বলল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের মতের সাথে একমত প্রকাশ করেন এবং বলেন:  لاطاعة لمخلوق في مصعية الخالق আল্লাহর বিরোধিতার ক্ষেত্রে কোন মাখলুকের অনুসরণ করা উচিত নয়। (امتاع: ১০/৬৩)
আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন বদরের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন জনগণ তাঁকে স্বাগতম জানাতে এলো। সালমাহ বিন সালামা যার একটি অপছন্দনীয় ঠাট্টার কারণে নবী করিম (সা.) তার থেকে রাগ করে ছিলেন, জনগণকে সম্বোধন করে বললো: এটাতে মোবারকবাদ দেয়ার কিছু নেই, আমরা একদল বুড়ো ও টাক লোককে হত্যা করেছি। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার কথায় হাসলেন এবং বললেন: তারা কোরাইশদের এক জনসমষ্টি ছিল, তাদেরকে দেখে যারা ভয় পেত যদি তাদেরকে কোন হুকুম দেয়া হত খুব কষ্টে তা পালন করতো। এ সময় সালামা সুযোগের সদ্ব্যবহার করলো এবং নবী করিমকে (সা.) তার সাথে রাগ করার কারণ জিজ্ঞেস করলো। রাসুল (সা.) বললেন: যখন বদর যুদ্ধের জন্য "রুহাহ" এর দিকে রওয়ানা হচ্ছিলাম একজন বেদুইন আরব আমার কাছে এলো এবং জিজ্ঞেস করলো: তুমি যদি বার্তা বাহক নবী, তাহলে বলো যে আমার এ গর্ভধারিণী উট কি বাচ্চা দেবে নর নাকি মাদী ? তুমি তখন বলেছিলে যে, তুমি নিজে তার সাথে সহবাস করেছ এবং তোমার থেকেই সে গর্ভধারিণী হয়েছে; অবশ্য এটা তোমার খুব খারাপ ব্যবহার ছিল ! সালামা আল্লাহর রাসুলের (সা.) কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো এবং তিনিও তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ইবাদত
আল্লাহর রাসুল (সা.) এর ইবাদতও ব্যতিক্রমধর্মী ছিল। তাহাজ্জুদের নামাজ যা নবী করিমের (সা.) জন্য ওয়াজিব ছিল এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছে চেয়েছিলেন যে,  نِصْفه اوانقص منه الا قليلا রাতের অর্ধেক অংশ অথবা তার চেয়ে একটু কম তিনি যেন কোরান ও নামাজ পড়েন। আল্লাহ তায়ালা কোরান মাজিদে সুরা মোজ্জাম্মেলের ২০ নং আয়াতে বলেছেন:
" ان ربك يعلم أنك تقوم ‌ادني من ثلثي الليل و نصفه و ثلثه و طائفة من الذين معك"
হযরত আলী (আ.) এক যুদ্ধে বলেন: সবাই ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায় করছিলেন।
" لقدر أيتنا و ما فينا قائم الا رسول الله ص تحت الشجرة يصلّي و يبكي حتي اصبح "
আমাদের মধ্য থেকে একমাত্র ব্যক্তি যে দাঁড়িয়ে ছিল এবং একটি গাছের নিচে নামাজ পড়ছিল এবং সকাল পর্যন্ত ক্রন্দন করছিল, তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল (সা.)।
আবুযার যিনি নিজেও জোহদ ও ইবাদতের এক উজ্জ্বল নিদর্শন ছিলেন, তিনি বলেন:
" صليت مع النبي في بعض الليل فقام يصلي فقمت معه حتي ‌جعلت اضرب رأسي الجُدُرات من طول صلاته "
অর্থাৎ এক রাতে রাসুলুল্লাহর (সা.) সাথে নামাজ পড়ছিলাম, তিনি এতো দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে নামাজ পড়ছিলেন যে অবশেষে আমি ক্লান্ত হয়ে দেয়ালের উপর আমার মাথা রাখতে বাধ্য হলাম।
এই তাহাজ্জুদের নামাজই ছিল যা আল্লাহর রাসুলকে (সা.) "মাহমুদের" মর্যাদায় অর্থাৎ শেফায়াতের মাকামে অধিষ্ঠিত করেছে। আর এটি আল্লাহর রাসুলের (সা.) প্রতি আল্লাহ তায়ালার সুপারিশ ছিল যে:
" و من الليل فتهجد به نافلة لك عسي أن يبعثك مقاما محمودا"
অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজকে আদায় করুন, সম্ভবত আল্লাহ আপনাকে মাহমুদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন।

দয়ালু ও রহমতের নবী (সা.)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরান মাজিদে এরশাদ করছেন: "و ما أرسلناك الا رحمة للعالمين‌" অর্থাৎ আমি আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। রাসুলুল্লাহকে (সা.) এ কারণে রহমতের নবী বলা হয়েছে যে, তিনি কখনো মানুষের প্রতি রাগান্বিত হতেন না। বিশেষ করে দ্বীনি শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে কখনোই না। বিভিন্ন রেওয়ায়েতে এসেছে যে:
" فكان لايبغضه شي‌ء و لايستفزه‌ এবং كان اوسع الناس صدرا এবং قد وسع ‌الناس منه بَسْطه و خُلْقه فصار لهم أبا "
এই সকল রেওয়ায়েতের মর্মকথা হচ্ছে এই যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের সুখ -দু:খের কথা শোনার জন্য এক উদার মনের ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং সঠিক সময়ে তাদেরকে হেদায়েত করতেন।
রাসুলুল্লাহকে (সা.) এ কারণে রহমতুল্লিল আলামিন বলা হয়, কেননা তিনি মূর্তি পূজারিদেরকেও যারা তাঁকে বিভিন্ন পন্থায় কষ্ট দিত তাদের জন্যও বদদোয়া করতেন না এবং বলতেন: হে আল্লাহ ! আমার উম্মতকে হেদায়েত করুন। যখন রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলা হলো, মুশরিকদের জন্য বদদোয়া করুন, তিনি বললেন: " اني لم‌أُبْعَث‌ لعّانا و انما بُعِثْت رحمة " আমি বদদোয়া করার জন্য প্রেরিত হইনি, আমাকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। (জান্নাতুন নাইম, ১/৪৫৪)
রাসুলুল্লাহর (সা.) রহমতের প্রভাব শুধুমাত্র মুসলমানদের উপরই সীমাবদ্ধ ছিল না ও নেই বরং আমাদের শেষ নবী (সা.) সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত ছিলেন ও আছেন।

জনদরদী বা জনসেবা
বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে জনসেবার অর্থ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একজন নেতার জন্য, একজন বক্তার জন্য, মসজিদের ইমাম সাহেব অথবা ব্যবসায়ীর জন্য বিশেষ কোন আচার আচরণসমূহ থাকতে পারে যা জনগণকে তাদের প্রতি আকর্ষণ করার কারণ হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রেও মানুষকে কষ্ট দিতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জামাতের নামাজ দীর্ঘক্ষণ হয়েছে বলে কখনো শোনা যায়নি। অবশ্য কেউ যদি তাড়াহুড়ো করে নামাজ পড়তো তিনি তা পছন্দ করতেন না বরং তাকে স্মরণ করিয়ে দিতেন এবং বারণ করতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
" يكثر الذكر، يقل‌ّ اللعن‌، يطيل الصلاة‌، يقصر الخطبة و كان لايأنف و لايستكبر. يمشي مع الارملة و المسكين فيقضي له حاجته‌ "
অর্থাৎ তিনি অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করতেন, অভিশাপ কম করতেন, মনোযোগ সহকারে আস্তে আস্তে নামাজ পড়তেন, নামাজের খোতবা ছোট করে দিতেন, অহংকারী ছিলেন না, ফকির ও এতিমদের সাথে বসতেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কাজকে পূরণ করতেন।
এমন অবস্থায় অন্যদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার আশায় থাকতেন না। অবশ্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহর (সা.) সম্মানকে যেন তারা রক্ষা করে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান পাওয়ার প্রত্যাশী ছিলেন না। তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়াকেও তিনি পছন্দ করতেন না। আর রাসুলুল্লাহর (সা.) এই গুণাবলী মানুষের অন্তরে তাঁর জন্য আরও বেশি ভালবাসা সৃষ্টি করে ছিল। রেওয়ায়েতে এসেছে:
" انه لم يكن شخص أحب اليهم‌ من رسول الله (ص‌) فكانوا اذا رأوه لم‌ يقوموا اليه لما يعرفون من كراهيته له‌ "
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি মানুষের কাছে এতো ভালবাসার পাত্র ছিল না, তা সত্ত্বেও সবাই তা জানতো যে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়াকে পছন্দ করেন না এবং এ কারণে কেউ উঠে দাঁড়াতো না।
রাসুলুল্লাহর (সা.) জনসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই যে, তিনি যখন জামাত সহকারে নামাজ আদায় করতেন আর যদি কোন বাচ্চার ক্রন্দনের আওয়াজ শুনতে পেতেন, তাহলে ছোট সুরা পড়তেন যাতে নামাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়। যখন তার কাছে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বললেন: যদি নামাজকে দীর্ঘায়ীত করতাম তাহলে বাচ্চার মায়ের মনোযোগ বিঘ্নিত হতো।
রাসুলুল্লাহ (সা.) দুর্বল ব্যক্তিদের সন্ধানে যেতেন, তাদের দেখা -শোনা করতেন। মদিনাতে এক কৃষ্ণ বর্ণের মহিলা বসবাস করতো যে মসজিদের কাজসমূহ আঞ্জাম দিত। কয়েকদিন তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সন্ধান নিলেন, অন্যরা বলল: সে ইন্তেকাল করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: তোমরা আমাকে খবর না জানিয়ে কি ভুল কাজ করোনি ? জনগণ মনে করেছিল, এই মহিলার এতোটা মর্যাদা নেই যে রাসুলুল্লাহকে (সা.) তার মৃত্যু সংবাদ জানাতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: আমাকে তার কবর দেখাও। তারা তাঁকে তার কবর দেখিয়ে দিল। তিনি মহিলাটির কবরের সন্ধানে গেলেন এবং তার রুহের প্রতি দরুদ পাঠ করলেন। তিনি বললেন: এই কবরসমূহ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে এবং তাদের প্রতি আমাদের দরুদ ও সালামের মাধ্যমে তাদের কবর নূরানি ও আলোকিত হয়ে পড়ে। (ফাতহুল বারি, ৩/১৩৩৭)
" أن امرأة سوداء كانت تقم‌ّ المسجد أو شابا، فقدها رسول الله (ص‌) فسأل عنها أو عنه‌. فقالوا: مات‌. قال‌: أفلا كنتم آذنتموني‌؟ فكأنهم صغّروا امرها أو أمره‌. فقال‌: دلّوني‌ علي قبره‌. فدلّوه فصلّي عليه‌. ثم قال‌: ان هذه القبور مملوءة‌ٌ ظُلْمة علي أهلها، و ان الله تعالي ينوّرها لهم‌ بصلاتي عليهم "
জনগণের মন থেকে নিজের প্রতি অবিশ্বাস ও মন্দ ধারণা দূর করা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর জীবনের শেষ প্রান্তে জনগণের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যে, তারা যদি মনে করে থাকে যে তিনি তাদের কোন অধিকার নষ্ট করেছেন, তারা তাঁর কাছ থেকে তাদের অধিকার বুঝে নিক। রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে জনগণের মন থেকে নিজ সম্পর্কে মানুষের সন্দেহ দূর করতেন। এ সম্পর্কিত অন্য একটি ঘটনা যা সাফিয়াহ বর্ননা করেছেন, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সা.) এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন, আমি একরাতে তাঁর কাছে এলাম এবং কথা শেষে চলে যাচ্ছিলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) ওসামা ইবনে যাইদের কক্ষে ছিলেন এবং আমার সাথে তিনিও উঠলেন এবং কিছুদূর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এলেন। পথিমধ্যে দু'জন আনসারের সাথে দেখা হলো, তারা যখন রাসুলুল্লাহকে (সা.) দেখল দ্রুত ফেরত যেতে লাগল। রাসুলুল্লাহ (সা. )তাদেরকে ডেকে বললেন:
" علي رسلكما آنها صفية بنت حيي‌، قالا: سبحان الله يا رسول الله‌. فقال رسول الله‌: ان الشيطان يجري ‌من الانسان مجري الدم‌. و اني خشيت أن يقذف في قلوبكما شيئا "
সে হচ্ছে সাফিয়াহ বিনতে হাই ইবনে আখতাব এবং আমার স্ত্রী, তারা বলল: সুবহানাল্লাহ; রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: মানুষের অন্তরে শয়তানের যাতায়াত হচ্ছে ঠিক তেমন যেমন মানুষের দেহে রক্তের চলাচল। আমি এই ভেবে শঙ্কিত হলাম যে, না করুক তোমরা কোন প্রকার ভুল বুঝে থাকো, আর তার উপর ভিত্তি করে খারাপ চিন্তা তোমাদের মাথায় আসে। (মোসান্নেফ, ৪/৩৬০)

বেদুইন আরবদের সাথে রাসুলুল্লাহর (সা.) ব্যবহার
রাসুলুল্লাহ (সা.) মূলত বেদুইন আরব সমাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, শুধুমাত্র আরব সমাজ নয়। সুতরাং বেদুইনদের আচার আচরণগুলো খুব নিম্নস্তরের ছিল যা রাসুলুল্লাহকে (সা.) সহ্য করতে হতো। একটি রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এক আরব বেদুইন মদিনায় আসলো এবং মসজিদ যে কি জিনিস তা সে জানতো না। সে মসজিদের এক কোণায় গিয়ে প্রসাব করে দিলো। সাহাবীরা অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে তিরস্কার করতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: তাকে কষ্ট দিও না, অতঃপর তাকে ডাকলেন এবং বোঝালেন যে, মসজিদ আল্লাহকে স্মরণ ও ইবাদত করার জায়গা, এরকম অশ্লীল কাজ করার জায়গা নয়।
মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম বলেন: আমি নামাজরত অবস্থায় ছিলাম এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি হাঁচি দিল, আমি বললাম: ইয়ারহামুকুমুল্লাহ। অন্য সবার দৃষ্টি আমার দিকে আকৃষ্ট হলো। লোকটি আবারও হাঁচি দিল এবং আমিও পুনরায় বললাম: ইয়ারহামুকুমুল্লাহ। যখন দেখলাম অন্যরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তাদেরকে বললাম: তোমাদের মা তোমাদের শোকে বসুক, কেন আমার দিকে চেয়ে আছো ? অন্যরা তাদের রানের উপর হাত চাপড়াতে লাগল এবং আমিও চুপ হয়ে গেলাম। যখন রাসুলুল্লাহর (সা.) নামাজ শেষ হলো, আমাকে ডাকলেন। আল্লাহর কসম কোন শিক্ষক তার আগে ও পরে আমি পাইনি যে, আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) না আমাকে কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করলেন। তিনি বললেন: তুমি যে নামায পড়েছ তার কোন লাভ নেই, কেননা তুমি নামাজের মাঝে কথা বলেছ, আর নামাজ হচ্ছে তসবিহ, তকবির ও কোরান তেলাওয়াতের স্থান। (সোবোলোল হুদা, ৭/১৯)
" فسكت فلما سلم رسول الله منصلاته‌، دعاني فبأبي و امي ما رأيت معلما قبله و لابعده أحسن تعليما منه‌. و الله ما ضربني و لا نهرني و لكن قال‌: ان صلاتك هذه لايصلح فيها شي من كلام الناس انما هي التسبيح و التكبير و تلاوة القرآن "
অন্য এক রেওয়ায়েতেও আল্লাহর রাসুল (সা.) এর দ্বীনি শিক্ষা দানের ধরণ বর্ণিত হয়েছে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে: হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ! নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি জোনোব অবস্থায় রয়েছি কি করবো ? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: আমার সাথেও অনেক সময় এরকম হয়। ঐ লোকটি বলল: আপনি আমাদের মতো নন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: আল্লাহর কসম; আমিও আল্লাহর বিনয়ীতম বান্দা হতে চাই আর তাকওয়ার ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী। (মুসলেম, ১১১০)
« يا رسول الله تدركني الصلوة و أنا جنب ‌أفأصوم ‌؟ حضرت فرمودند: و أنا تدركني الصلاة و أنا جنب فأصوم‌. فقال‌: لست مثلنا يا رسول الله ‌! قد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك و ما تأخر. فقال‌: و الله اني لا¤رجو أن أكون أخشاكم لله و أعلمكم بما اتّقي‌ ».
 মায়ায ইবনে জাবাল ও আবু মুসা আশআরী যখন ইয়ামানে যাচ্ছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তাদেরকে বললেন: يَسّرا و لا تُعَسّرا، بشّرا ولا تنفرّا (بخاري ـ فتح الباري 6124.10) জনগণের সাথে সহজ ব্যবহার করো কঠিন ব্যবহার করো না, সুসংবাদ দিও বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।
কিছু লোক মদিনায় এলো এবং জনগণকে জিজ্ঞাসা করলো: রাসুলুল্লাহ (সা.) কেমন ইবাদত করেন। যখন শুনল এবং অনুভব করলো যে তিনি খুব বেশি পরিমাণে ইবাদত করেন না, তখন বলল: খুব ভাল, যেহেতু তিনি আল্লাহর রাসুল তাই আল্লাহ তায়ালা তার সকল কিছুকে ক্ষমা করেছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল: আমি নিয়মিত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ইবাদত করি, আরেকজন বলল: আমি সর্বদা রোজা রাখব, অন্য আরেকজন বলল: আমি বিয়ে করব না শুধু আল্লাহর ইবাদত করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) এলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমরা এরকম কথা বলছ কিন্তু আমি তোমাদের চেয়ে বিনীত ও পরহেজগার হওয়া স্বত্বেও রোজা রাখি ও খাদ্যও খাই, নামাজ পড়ি, বিয়েও করেছি আর এটি হচ্ছে আমার সুন্নত, যে কেউ আমাকে মানে সে যেন আমাকে অনুসরণ করে।
" اما و الله اني لاخشاكم لله و أتقاكم له‌، لكني‌ اصوم و افطر و اصلي و ارقد و أتزوج من النساء فمن رغب عن سنتي فليس مني‌. " (بخاري‌، فتح  البار 506)
মূল: রাসুল জাফারিয়ান।
তথ্যসূত্র: এখান থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন