নবুওয়তী আদব তথা ইসলামী শিষ্টাচার মানব জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, যারা সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব, লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও বীরত্বে ছিলেন অতুলনীয়

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ইসলামে প্রতিবেশীর সম্মান

লিখেছেন: মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী         
   আমাদের আশপাশে যারা বাস করে তারাই আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশী কারা এ বিষয়ে রাসুলকে (সা.) প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনসামনে, পেছনে, ডানে ও বামে চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত সবাই প্রতিবেশী। হকের দিক থেকে প্রতিবেশীকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এক. মুসলমান আত্মীয় প্রতিবেশীর রয়েছে তিনটি হকমুসলমান হিসেবে, আত্মীয় হিসেবে এবং প্রতিবেশী হিসেবে। দুই. মুসলমান প্রতিবেশীর রয়েছে দুটি হকমুসলমান হিসেবে এবং প্রতিবেশী হিসেবে। তিন. অমুসলিম প্রতিবেশীর রয়েছে একটি হক। আর তা হলো প্রতিবেশীর হক।
রাসুল (সা.) পিতা-মাতার পরই প্রতিবেশীদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ বা সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কে সে লোক? তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না। (বুখারি শরীফ)।
বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, অসুখে-বিসুখে, বিয়ে-শাদিতে যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতায় প্রতিবেশীর মতো আপনজন আর কেউ নেই। প্রতিবেশীর প্রতি অন্যায় আচরণ, জুলুম, নির্যাতন করা, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা, তাদের যে কোনোভাবে কষ্ট দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। প্রতিবেশী যদি এ অপরাধ ক্ষমা না করে তাহলে বেহেশতে যাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে পেট ভরে খায় অথচ প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে সে ঈমানদার নয়। অন্যত্র তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তির প্রতিবেশী তার অত্যাচার ও অন্যায় আচরণ থেকে রক্ষা পায় না সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে প্রতিবেশীর সঙ্গে মিলেমিশে বাস করা, তাদের সুখে সুখী হওয়া, তাদের দুঃখে দুঃখী হওয়া, তাদের উন্নতি ও কল্যাণে কাজ করা এবং তাদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। আল কোরআনে আল্লাহপাক মানুষকে মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ‘… পিতা-মাতার সঙ্গে সত্ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। (সূরা নিসা-৩৬)
প্রতিবেশীর সঙ্গে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করা, মাঝে-মধ্যে তাদের ঘরে খানাখাদ্য পাঠানো, দুঃখে, কষ্টে-বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাইলফলকরূপে বিবেচিত। প্রতিবেশীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক (সা.) বলেন, জিবরাইল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এমনভাবে নির্দেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ধারণা করেছিলাম তিনি সম্ভবত তাকে (প্রতিবেশীকে) ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন। (বুখারি শরীফ)
প্রতিবেশী মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক না কেন, প্রতিবেশী হিসেবে ভালো আচরণ পাওয়ার এবং বিপদে-আপদে সাহায্য-সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। সুন্দর ব্যবহারই পুণ্য। মানবসেবা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই প্রতিবেশীর হক যথাযথ আদায় করা, তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা, তাদের প্রতি সেবার হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রতিটি মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব। আল্লাহ প্রতিবেশীর হক আদায় করার তৌফিক আমাদের দিন।
 লেখক : গ্রন্থকার ও প্রাবন্ধিক

তথ্যসূত্র: ধর্মচিন্তা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন